ভালোবাসার ছোট গল্প
ভালোবাসার ছোট গল্প
---- রহিম বাদশা
ছেলেটার নাম দীপ্ত। সে রোদেলা নামের মেয়েটিকে খুব ভালোবাসে। তারা অল্প সময়ের মধ্যে দুজন দুজনকে এতটা ভালোবেসেছিল যা সত্যিই স্বপ্নের মত। ও তাদের পরিচয়ের শুরুটা কীভাবে তা তো বলা হলো না......
তারা সবসময় একই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করত। কিন্তু কারো সাথে কারো কথা হতো না। দীপ্ত ছেলেটা একসময় খুব উশৃংখল থাকলেও সময়ের বিবর্তনে নিজেকেও বদলে নিয়েছে।
ঠিক তখন থেকেই দীপ্ত মেয়েদেরকে দেখলে এড়িয়ে চলত। কোন মেয়ের সাথে পারতপক্ষে কথা বলা তো দূরে থাক, সামনেই যেত না।
ঠিক তখনি হঠাৎ করে ভুল বোঝাবুঝির সূত্র ধরে শুরু হলো তাদের আলাপ চারিতা। রোদেলা দীপ্তর প্রতি ক্রমেই দূর্বল হতে থাকে। তেমনি দীপ্তও নিজের মাঝে ধীরে ধীরে সজীবতা ফিরে পেতে থাকে। রোদেলা দীপ্তকে নিয়ে এতোই ভাবত, এতো খেয়াল রাখত। যে সে অল্প সময়েই দীপ্তর অগোছালো জীবনটাকে গোছালো করে ফেলে। দীপ্ত ছিল একটু চাপা স্বভাবের। সে তার মনের ভালোবাসার সমস্ত কথা গুলো বলতে না পারলেও তার সমস্ত আকাশটা জুড়ে ছিল রোদেলার বিচরণ। রোদেলাও দীপ্তকে এতোটা ভালোবাসতো যে সে দীপ্তকে ছাড়া একটা মুহুর্তও ভাবতে পারত না। দীপ্তর পাশে সবসময় সে ছায়ার মতো থাকত। দীপ্তর কিচ্ছু হলে রোদেলা অস্থির হয়ে উঠত। মাঝে মাঝে তাদের মধ্যে ঝগড়া হতো, মান-অভিমান, রাগারাগি, একটু চোখের জল যা তাদের ভালোবাসাকে আরও গভীর করে তুলত।
কিন্তু সবার কপালে তো আর ভালোবাসা সয় না। হঠাৎ করেই একটা ঝড় ধেয়ে আসল রোদেলা-দীপ্তর সাজানো বাগানে। সব লন্ডভন্ড তছনছ হয়ে পড়ে রইল দু প্রান্তে কিছু ধ্বংসাবশেষ। চির ধরল তাদের মধুর সম্পর্কে। দীপ্ত-রোদেলার ভালোবাসা ছিল যেমনি গভীর। তেমনি তাদের অভিমানটাও অনেক গভীর আর বেখেয়ালি। ক্রমেই দীপ্ত-রোদেলার মাঝে দূরত্ব বেড়েই চলল। চলতে চলতে অনেকটা সময় কেটে গেল। দীপ্ত মাঝে সাজে প্রচন্ড যন্ত্রণায় যখন আর থাকতে পারত না, তখন সে রোদেলাকে একটু ফোন করত। কিন্তু রোদেলার ভালোবাসা যেমন প্রখর ছিল। তেমনি তার অভিমানটাও ছিল তীব্র। সে দীপ্তর সাথে কথা বলতেও চাইত না। দীপ্ত এভাবেই নিজেকে মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করল। এভাবেই আরও অনেকটা সময় পার হয়ে গেল। একটা সময় দীপ্ত আক্রান্ত হলো এক দূরারোগ্য রোগে। রোগে, শোকে, দুঃখ, যন্ত্রণায় ভুগতে ভুগতে চলে আসল দীপ্তর জীবনের অন্তিম লগ্ন। আগেই বলেছিলাম দীপ্ত তার বড়ই চাপা স্বভাবের। সে সব কিছু গোপন করে তার ভালোবাসার রোদেলাকে ফোন দেয়। সে রোদেলার সাথে একটা বার দেখা করতে চায়। অনেক অনুনয় বিনয়ের সাথে তার সাথে একটা বার দেখা করতে চাইল। একটা বার সে তার চাঁদ মুখখানা দেখতে চাইল। কিন্তু রোদেলার অভিমানের পর্দা তখনও উঠল না। হয়তো রোদেলাও কখনোও ভাবে নি এটাই ছিল তার কাছে দীপ্তর শেষ চাওয়া। তার ঠিক দু দিন পরেই হঠাৎ করেই রাত্রে অচেতন ঘুমের মাঝেই চলে গেল দীপ্ত দুনিয়ার মায়া ছেড়ে। তার দুদিন পর দীপ্তর এক বন্ধুর কাছে তার মৃত্যুর খবর শুনতে পায়। সে ছুটে যায় সেখানে, যেখানে তার তার বেঁচে থাকার শেষ নিঃশ্বাসটুকু চিরশায়িত রয়েছে। রোদেলা দীপ্তর কবরের উপর ঝাপিয়ে পড়ে, আঁকড়ে ধরে দুহাতে। কিন্তু বড্ড দেরি হয়ে গেছে। রোদেলার অপূর্ব মায়াবী চোখের জলে ভিজে কর্দমাক্ত হয়ে যায় আঁকড়ে ধরা মাটি। তখনি রোদেলার মনের কানে ভেসে আসে দীপ্তর ভুবন ভোলানো কথা.........
দীপ্তঃ এই পাগলি, তুই কাঁদছিশ কেন?
রোদেলাঃ তুমি আমাকে ছেড়ে চলে গেলে কেন?
দীপ্তঃ ধুর পাগলি, আমি কী তোকে ছেড়ে যেতে পারি! আমি যে সব সময় তোর সাথেই আছি, সাথেই থাকব। তুই না বলতি আমি তোর নিঃশ্বাস! তবে কী আমি তোকে ছেড়ে যেতে পারি?
রোদেলাঃ কিন্তু আমি যে তোমার শেষ ইচ্ছে পূরণ করতে পারলাম না। তুমি আমায় একটা বার দেখতে চাইলে। কিন্তু তা যে আমি পারলাম না।
দীপ্তঃ এই পাগলি এই, তোকে না বলছি একদমই কাঁদবি না। ভালোই তো হলো। তখন তো তুই অভিমানে আমার সামনে আসতি। তোকে আমি ছুঁয়ে দেখতে পারতাম না। আর এখন তো তুই আমার বুকেই আছিস। জড়িয়ে আছিস আমায়।
এই...এই... একদম কাঁদবি না। তুই কাঁদলে যে আমার ভিষণ কষ্ট হয়।
আমায় আর কষ্ট দিশ না......
আমি ঐ আকাশ থেকে তোর হাসি হাসি একটু হাসব......
তোর একটু সুখ দেখে আমিও একটু সুখী হব......
শেষ বারের মতো সুখ থেকে আর বঞ্ছিত করিস না......
(লেখার দিনকাল মনে নেই)
-- নোট :--
এই লেখার সমস্ত স্বত্বাধিকার © "রহিম বাদশা" এর সংরক্ষিত। এই লেখার কোন অংশই লেখকের অনুমতি ব্যতীত ফটোকপি, রেকর্ডিং, বা অন্যান্য বৈদ্যুতিক বা যান্ত্রিক পদ্ধতি সহ, কোনও আকারে বা কোনও উপায়ে পুনরুতপাদন, বিতরণ বা প্রেরণ করা যাবে না । তবে শেয়ার এবং লেখকের ক্রেডিট দেয়ার শর্তে অনুমতি দেয়া হলো।
অনুমতি অনুরোধের জন্য, লেখকের কাছে চিঠি লিখুন, নীচের ঠিকানায় -
No comments