Header Ads

চোখ




চোখ
---- রহিম বাদশা

■ এক

রাফসান, খুব দুষ্টু প্রকৃতির একটা ছেলে । খুব চঞ্চল ছিল সে । তবে সে কারো সাথে তেমন মিশতে পারতো না । দুষ্ট হলেও কিছুটা লাজুক আর একঘেয়ে ছিল রাফসান। খুবই মধ্যবিত্ত একটা পরিবারের ছেলে সে । খুবই সামান্য ছিল তার চাহিদা । সে সাধ্যের মধ্যেই সুখ খুঁজে নেয়ার চেষ্টা করত । বেশ আনন্দ আর মজা করেই তার জীবন কাটছিল ।
এরই মধ্যে স্কুলের গন্ডি পেড়িয়ে রাফসান কলেজে ভর্তি হলো । নতুন আবহাওয়া, নতুন বন্ধু পেয়ে তার জীবনটা যেন নতুন রূপ নিতে চাইছিল ।কিন্তু রাফসান কেন জানি নিজেকে সবার সাথে মেলাতে পারতো না । তার মনে সবসময়ই কিসের যেন একটা ভয় কাজ করতো । এভাবেই কাটছিল তার । হঠাৎই ক্লাসের ফাঁকে সে খেয়াল করল তার দিকে একটা মেয়ে বেশ কয়েকদিন ধরে আড়চোখে তাকিয়ে থাকে । সে দেখেও না দেখার ভান করে রইল । কলেজ শেষে প্রতিদিনের মতো রাফসান সেই কদম গাছটার নিচে বসলো । প্রতিদিনের মতো কত শত চিন্তা তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে । 
রাফসান বাসায় চলে গেল । সে তার নিজেকে নিয়ে কখনো ভাবে না । নিজের জন্যে কখনো কষ্ট পায় না । কিন্তু সে তার পরিবার আর কাছের মানুষ গুলোর জন্য খুবই নিরানন্দে থাকে । তাদের জন্য সে অনেক কিছু করতে চায় । কিন্তু কিছু করতে পারে না । অবশ্য তাকে কিছু করতেও বলা হয় না । রাফসান ছিল তাদের পরিবারের একমাত্র সন্তান । ভালোই কাটছিল এভাবে তার ।

প্রায় চার মাস পরে, ,,,,,,,
সেই মেয়েটি , যে আড়চোখে রাফসান কে দেখতো । মেয়েটির নাম নীলিমা। তার সাথে তেমন কথা না হলেও আড়ালে আড়ালে রাফসান ও তাকে দেখতো আর ভাবত মেয়েটার চোখে কিসের যেন একটা মায়া আছে । তার মাঝে ভুলে যাওয়ার মতো কী যেন একটা আছে । রাফসান প্রায়ই নীলিমার কথা ভাবতে ভাবতে শিক্ষকের লেকচার গুলিয়ে ফেলত । এই তো সেদিন ক্লাসে জহির স্যার তাকে জিজ্ঞেস করল যে, চাঁদে প্রথম অবতারণ করে কে ? সে কিছু না ভেবেই বলে ফেলল নীলিমা । পরে সারা ক্লাস যখন অট্টহাসিতে ফেটে পরল তখন তার যেন হুশ এল, বলল নীলআর্মস্ট্রং স্যার । রাফসান অনুভব করল সে নীলিমা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গেছে । সেদিনই প্রথম নীলিমা রাফসানের কাছে একটা নোট চাইল । কিন্তু রাফসানের বইয়ের সাথে খুব অল্প স্বল্প যোগাযোগ ছিল । তার চোখে মুখে যেন দুনিয়ার সমস্ত লজ্জা হুমড়ি দিয়ে পরল । সে প্রতিদিনের পড়া গুলোই ঠিক ভাবে করে না, নোট করা তো দূরে থাক । সে মুখটা একটু নিচু করে বলল, কাল নিয়ে আসব । নীলিমা মুচকি একটা হাসি দিয়ে চলে গেল । রাফসানের বুকের ভেতর কেমন যেন একটা শীতল বাতাস অনুভব করল । 
আজ রাফসান আর কদম গাছ তলায় বেশি ক্ষণ দাঁড়ালো না, বাসায় চলে আসল । বাসায় এসে খেয়ে সে ঘুমিয়ে পরল । ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে সে স্বপ্ন দেখতে লাগলো অন্য একটা ছেলে যে নীলিমা কে নোট দিচ্ছে আর তার সাথে হাত ধরে হাঁটছে।
রাফসানের ঘুম ভেঙ্গে গেল । তখন সন্ধ্যে 7 . 22 বাজে । সে উঠেই ছুট লাগলো তার এক বন্ধুর বাসায় । কিন্তু বাসায় গিয়ে তাকে পেল না । সে আরেক বন্ধুর বাসায় গেল । কিন্তু সে ও বাসায় নেই, স্বপরিবারে বেড়াতে গেছে । অবশেষে সে অন্য একটা বন্ধুর কাছে নীলিমার চাওয়া সেই কাঙ্ক্ষিত নোটটি পেল । তখন 10 টা বেজে 49 মিনিট । সে বাড়ির পথে হাটছে আর ভাবছে, একটা মেয়ে তার কাছে নোট চাইলেই তার জন্যে এতো কষ্ট করতে হবে ? তবে কি রাফসান সত্যিই নীলিমার প্রেমে পড়ে গেল ?
হ্যা, রাফসান সত্যিই নীলিমার প্রেমে পড়ে গেল । পরের দিন নোট টি দেয়ার সময় নীলিমা কে বলল, 
 তোমাকে একটা কথা বলব ? 
হুম বলো । 
 না মানে বলছিলাম , ইয়ে , ইয়ে, , , , , , , 
ইয়ে ইয়ে করছ কেন, বলো ? 
না মানে, তোমার কাছে পানি হবে ? 
হুম হবে । এটাই বলতে চেয়েছিলে ? 
পানি খেতে খেতে রাফসান বলল না । তবে অনেক দিন ধরেই বলব ভাবছি ।
কি সেটা তো বলবে ? ?
না কিছু না বলে রাফসান চলে গেল ।
নীলিমা ও বুঝতে পেরেছে, রাফসান কি বলতে চেয়েছে ।
তার কয়েকদিন পর খুব বৃষ্টি হচ্ছে। নীলিমা ভিজে ভিজে বাড়ি যাচ্ছে দেখে রাফসান দৌড়ে গিয়ে কলেজের পিয়ন আবুল চাচার কাছ থেকে ছাতা চেয়ে এনে নীলিমা কে বাসা অবধি পৌঁছে দেয় রাফসান । আর ফেরার পথে সমস্ত সাহস এক করে বলেই ফেলে "নীলিমা, আমি তোমাকে ভালোবাসি ।" বলেই হনহন করে হাটতে থাকে রাফসান । আর নীলিমা মুচকি মুচকি হাসে, আর রাফসানের ছুটে চলে যাওয়াটা দেখতে থাকে । ভালোবাসার পথ চলা যেন এখান থেকেই ।বেশ ভালোই কাটছিল তাদের । তারা দুজন দুজনকে খুব ভালোবাসতো । তাদের মাঝে ঝগড়া, ভালোবাসা, মান, অভিমান, খুনসুটি সবই ছিল ।



■ দুই

এভাবে খুব সুন্দর দুষ্টু মিষ্টি ভালোবাসায় কেটে গেল একটি বছর । বেশ ভালোই চলছিল । কিন্তু হঠাৎ করেই নীলিমার বাসা থেকে তার বিয়ে ঠিক করে ফেলে । তখনও তাদের পড়াশোনা শেষ হয়নি ।
পরদিন ক্লাস শেষে সেই কদম গাছ তলায় নীলিমা আর রাফসান দাড়িয়ে । নীলিমা অনেক কষ্ট নিয়ে সবগুলো কথা রাফসাকে বলল । রাফসান সব গুলো কথা শুনল । কিন্তু রাফসান কিছু বলতে পারল না । পর মুহূর্তে রাফসান শুধু নীলিমার চলে যাওয়াটা নীরবে দেখতে লাগলো।
আজ রাফসান আর বাসায় ফিরতে পারল না । সারাদিন সে কেবল নিশ্চুপ বসে ছিল । কিন্তু তার কিছুই করার ছিল না । আর অন্য দিকে নীলিমার সারাটা দিন নীরবে কাঁদতে কাঁদতে চলে গেল ।

কয়েকদিন পর,,
আগামী কাল নীলিমার বিয়ে । দিনের আলোতে রাফসান চোখের জল লুকিয়ে রাখতে পারলেও সে রাতের অন্ধকারে চোখের জল লুকিয়ে রাখতে পারে নি। ফলশ্রুতিতে তার চোখের নিচের পরে যাওয়া কালো দাগটা বুঝিয়ে দিচ্ছে সে এখন কতোটা অসহায় ।
আজ নীলিমার বিয়ে । 
নীলিমার বাসার সামনের মোড়ের চায়ের দোকানটায় রাফসান বসে আছে ।কয়েক মাস রাফসান চুল দাড়ি কিছুই কাটেনি । অনেকটা পাগল পাগলই লাগছে । অবশ্য রাফসান এখন প্রায় পাগলই হয়ে গেছে । অবশেষে নীলিমার বিয়ে হয়ে গেল । সে অসহায় কাঙ্গালের মতো কেবল তার , না এখন আর নীলিমা একা না , তাদের চলে যাওয়া দেখল ।
সেই সাথে সাথে রাফসানের জীবন থেকে সমস্ত খুশি, স্বপ্ন , আশা, আকাঙ্ক্ষা সবই যেন কোন এক ঝড় গ্রাস করে নিয়ে গেল ।শুধু রেখে গেল বুক ভরা যন্ত্রণা, কিছু স্মৃতি আর ভালোবাসা । রাফসানের ভালোবাসা কখনো কেউ কেরে নিতে পারবে না । সে সমস্ত কষ্ট বুকে চেপে আমৃত্যু নীলিমাকে ভালোবেসে যাবে । সবার অলক্ষ্যে কয়েক ফোঁটা চোখের জল রাফসানের গাল বেয়ে অযত্নে না কাটা দাড়ি গুলোকে ভিজিয়ে দিল ।

পাঁচ বছর পর,
রাফসানের আর পড়াশুনা হয়নি । নীলিমার বিয়ের মাস খানিক পরেই রাফসান অসুস্থ হয়ে পড়ে । রাফসান নীলিমার সাথে কোন রকম যোগাযোগ না করলেও সে সবসময় নীলিমার খোঁজ খবর রাখতো । এইতো নীলিমার প্রথম বিবাহ বার্ষিকীতে না জানিয়ে তার এক বান্ধবীকে দিয়ে একটা শাড়ি উপহার দেয় । আর সেটা যখন দূর থেকে নীলিমার গায়ে পড়া দেখে সে আনন্দে একটু হেসে দেয় । তার ইচ্ছা করে যদি সারাটা দিন, সারাটা রাত নীলিমাকে দুচোখ ভরে দেখতে পারতো! আবার পরক্ষণেই তার চোখ যেন ঝাপসা হয়ে যায় নোনা জলে ।

কিভাবে পাঁচটি বছর কেটে গেল তা ভাবছে রাফসান হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে । গত পাঁচটি বছর ধরে রাফসান খুব অসুস্থ । রাফসান ব্রেন ক্যান্সারে আক্রান্ত । পারিবারিক অসচ্ছলতার কারণে রাফসানের পরিবার রাফসানের চিকিৎসা করাতে পারেনি । হয়তো সে আর কটা দিনই এই পৃথিবীর আলো দেখতে পাবে । আর কয়েকটা দিনের অতিথি মাত্র সে । হঠাৎই চলে যাবে না ফেরার দেশে । রাফসান সব জানে, কিন্তু তার কোন কষ্ট নেই । সে হাসপাতালের বিছানার এক পাশে শুয়ে পাঁচ বছর আগে কার দুষ্টু মিষ্টি ভালোবাসার কথা ভাবে আর মাঝে মাঝে মাথায় প্রচন্ড ব্যাথায় ছটফট করে ।
নীলিমার বেশ সুখেই কাটছিল দিন। নীলিমা সমস্ত অতীতকে ভুলে জীবনটা নতুন করে সাজিয়ে নিয়েছে । এটা নীলিমার স্বার্থপরতা না । সে তার স্বামী শাহেদকে ঠকাতে চায়নি । তাই সেও সব মেনে নিয়েছে ।
নীলিমা মা হতে যাচ্ছে । আর কয়েকটা দিন বাকি । কিন্তু হঠাৎ করেই নীলিমার স্বামী একটা দুর্ঘটনায় তার চোখ দুটি হারায় । শাহেদের চোখ দুটি নষ্ট হয়ে যায় । নীলিমার সে কি কান্না যে তাদের প্রথম সন্তান,তাদের সমস্ত স্বপ্ন , শাহেদের একমাত্র চাওয়া তাদের সন্তানকে তার স্বামী দেখতে পাবে না । শাহেদ বাবা হবে অথচ সে তার সন্তানকে দুচোখ ভরে দেখতে পাবে না ।
রাফসান শুনতে পায় শাহেদের এক্সিডেন্টের কথা । এও শুনতে পায় যে নীলিমা এরকম শরীর নিয়ে দিন রাত শাহেদের জন্যে কান্নাকাটি করে । রাফসান সব সইতে পারে, কিন্তু নীলিমার চোখের জল সইতে পারে না ।
সারাটা রাত রাফসান নির্ঘুম কাটলো । সে বুঝতে পারছে সে যে এই রঙিন দুনিয়ায় আর ক্ষণিকের অতিথি । সে তো তার ভালোবাসার মানুষকে কিছুই দিতে পারল না । তার ভালোবাসাটা ধরেও রাখতে পারল না । এবার তাকে এমন কিছু একটা দিতে হবে যেন নীলিমা সারাটা জীবন বলতে পারে রাফসান তাকে সামান্য কিছু হলেও দিয়েছে । রাফসান ঠিক করে ফেলল, তার চোখ দুটি সে তার ভালোবাসা নীলিমার স্বামী শাহেদকে দিয়ে দিবে । আর এই চোখ দিয়ে সে তার ভালোবাসার নীলিমাকে দেখবে । সে হয়তো আর থাকবে না, কিন্তু তার এই চোখ দিয়ে সে সারা জীবন নীলিমাকে দেখতে পাবে ।আর নীলিমার চোখেও আর কোন জল থাকবে না ।সে তার বন্ধুদের আর ডাক্তারকে বলে রাখে সে মরে যাওয়ার পর তার চোখ দুটি যেন শাহেদকে দেয়া হয়।


■ তিন

আর ভাগ্যের কি অদ্ভুদ খেলা । সে রাতেই নীলিমার জন্যে শেষ একটা চিঠি লিখতে লিখতে রাফসান দুনিয়ার সমস্ত ভালোবাসা, মায়া ত্যাগ করে শত ব্যাথা আর যন্ত্রণা বুকে নিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমায়। বন্ধ হয়ে যায় তার নিঃশ্বাস । চিঠি লিখতে লিখতে যে চোখ দুটো দিয়ে উষ্ণ এক জল ঝরছিল । হঠাৎই তা কেমন জানি শীতল হয়ে গেল । বন্ধ হয়ে গেল চোখের জল । নীথর হয়ে পরে রইল মৃত রাফসান , আর পাশে পড়ে রইল তার ভালোবাসার নীলিমাকে লেখা তার শেষ চিঠিটা ।

রাফসানের চিঠি :

"নীলিমা, 
কেমন আছো তুমি ? নিশ্চয়ই খুব ভালো আছো ? 
 আমি ? হ্যা, আমি ও খুব ভালো আছি । তুমি ভালো থাকলে কি আমি আর খারাপ থাকতে পারি ? জানো, তোমায় না খুব মনে পড়ে । দিনটা তো কোন রকমে কাটিয়ে দেই ।কিন্তু রাতটা ভীষণ লম্বা মনে হয় । কোন ভাবেই কাটতে চায় না । তবুও মেঘের মাঝে চাঁদটার লুকোচুরি খেলা দেখে কোন ভাবে কাটিয়ে দেই ।
জানো, আমার বন্ধুরা না মাঝে মাঝে তোমাকে নিয়ে মন্দ কথা বলে, তখন না আমি ওদের সাথে ঝগড়া করি । আবার যখন আমাদের দুজনার ভালোবাসার ছোট্ট ছোট্ট পাগলামির কথা বলে তখন না ছোট বাচ্চাদের মত খিলখিলিয়ে হেসে উঠি ।
শুনলাম তুমি মা হবা। শুনে অনেক খুশি হয়েছি। আর তোমার বর শাহেদের এক্সিডেন্টের কথাটা শুনে খুব খারাপ লাগছে ।
নীলিমা, তুমি কি জানো আমি তোমাকে এখনও ঠিক সেই আগের মতোই ভালোবাসি । তোমার উপর আমার একটুও রাগ নেই । একটুও অভিমান নেই । নেই কোন অভিযোগ । কিন্তু আমি জানি, আমার উপর তোমার অনেক রাগ । আসলে জানো, শেষ তোমার কথা গুলো শুনে বুকের ভেতরটা ফেটে গেলেও সেদিন আমার কিছুই করার ছিল না ।
ও শোন, আমি এখন হাসপাতালে । হাঃ হাঃ হাঃ, , , , , ভয়ের কিছু নেই । এত দিন ভয়ে ছিলাম । এই তো কয়েকদিন আগেই ভয় কেটে গেছে । ডাক্তার বলে দিয়েছে আমি আর মাত্র কয়েকটা দিন বাঁচব । অবশ্য কয়েকটা দিনেরও গ্যারান্টি নেই । তাছাড়া আমার আর এই পৃথিবীটা ভালোও লাগে না । নিজেকে বড় জঞ্জাল মনে হয় । কিন্তু তোমাকে কাছ থেকে খুব দেখতে ইচ্ছে হয় ।
নীলিমা জানো, তুমি তো দেখতেই আমি কেমন ঘুম পাগল ছিলাম । কিন্তু আমি না আর আগের মতো ঘুমোতে পারি না । মাথায় হঠাৎ করেই অসহ্য ব্যাথা করে । আর ঘুমটা ভেঙ্গে যায় । ঘুম ভাঙ্গার পর নিজেকে খুব নিঃস্ব আর একা লাগে । মনে হয় বুকের ভেতরটায় কি যেন নাই । খুব ফাঁকা ফাঁকা লাগে ।
নীলিমা, আমায় ক্ষমা করে দিও । তোমাকে আমি কিছুই দিতে পারিনি । শেষ বারের মতো যদি কিছু দেই নিবে ? না করো না । আর না করলেই কে শুনবে বলো ? কারণ চিঠিটা যখন তুমি পড়বে তখন আমি গভীর ঘুমে থাকবো । তুমিও আমার ঘুম ভাঙ্গাতে পারবে না । আমি তোমাদের মাঝ থেকে অনেক দূরে চলে যাব । 
ও হ্যা, আমার চোখ দুটো তোমার বর শাহেদকে দিয়ে যাচ্ছি । শাহেদের জন্যে না । ওর ওপর আমার এমনিতেই অনেক রাগ জমে আছে । আমি তো মরেই যাবো, কিন্তু মরার পরও যে আমার তোমাকে দেখার ইচ্ছে মরবে না । তাই আমি চাই আমার চোখ দুটো বেঁচে থাকুক । আর এই চোখ দুটো দিয়েই আমি তোমাকে দেখে যাবো । 
আরো অনেক কথা বলার ছিল । কতো কতো না বলা কথা যে তোমায় বলতে চেয়েছিলাম । কিন্তু এতো সময় কই বলো । আমার খুব ঘুম পাচ্ছে । তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে । থাক, একটু পরেই হয়তো তোমার বরের চোখ দিয়ে , ,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,"

রাফসান শেষ করতে পারেনি তার কথা গুলো । এর আগেই সে নির্বাক হয়ে পরে । চির নিদ্রায় শায়িত হয় রাফসান ।

সাত দিন পর, , , 
শাহেদ এখন দেখতে পায় । সে তার চোখের দৃষ্টি ফিরে পেয়েছে । নীলিমার ও ফুটফুটে একটি ছেলে হয়েছে । আর তার স্বামী শাহেদ ও দুচোখ ভরে দেখতে পেয়েছে তার সন্তানকে ।

আরো তিন দিন পর, , , 
নীলিমার চিঠি হাতে এখন রাফসানের কবরের পাশে । চিঠিটা সে তিন দিন আগেই পেয়েছে । নীলিমার আজ পুরনো সেই দিন গুলোর কথা ভিষন মনে পরছে । দুচোখ বেয়ে যেন বৃষ্টির মতো জল ঝরছে । রাফসানের জন্য আনা ফুল গুলো দিয়ে নীলিমা চলে গেল ।
রাফসান যেমনি তার ভালোবাসা বাঁচিয়ে রাখতে তার চোখ দুটি পৃথিবীতে রেখে যায় । নীলিমা ও তেমনি রাফসান নামটি বাঁচিয়ে রাখতে তার সন্তানের নাম রাখে রাফসান । এক রাফসান চলে গিয়ে জন্ম হলো আরেক রাফসানের । শুরু হলো আরেক রাফসানের জীবন, জীবনের গল্প।

Love is never end. . . . . . . . . .

November 8, 2015

-- নোট :--
® Rahim Badshah
এই লেখার সমস্ত স্বত্বাধিকার © "রহিম বাদশা" এর সংরক্ষিত। এই লেখার কোন অংশই লেখকের অনুমতি ব্যতীত ফটোকপি, রেকর্ডিং, বা অন্যান্য বৈদ্যুতিক বা যান্ত্রিক পদ্ধতি সহ, কোনও আকারে বা কোনও উপায়ে পুনরুতপাদন, বিতরণ বা প্রেরণ করা যাবে না ।  তবে শেয়ার এবং লেখকের ক্রেডিট দেয়ার শর্তে অনুমতি দেয়া হলো। 
অনুমতি অনুরোধের জন্য, লেখকের কাছে চিঠি লিখুন, নীচের ঠিকানায় - 

"মেইল করুন বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যোগাযোগ করুন

No comments

Theme images by borchee. Powered by Blogger.