বামন পরানে চাঁন্দের খোয়াব
----রহিম বাদশা
রাইত হইলেই বুকের মইধ্যে কেমুন জানি করে,
ভূমিকম্পে যেমুন জমিন কাইপ্পা ওডে,
তেমনি তোমার লাইগ্গা বুকের মইধ্যেও ধরফর ধরফর করে,
কেন তোমার লাইগ্গা এমুন লাগে ?
রাইতে বেলা যহন আসমানডার দিক চাই,
লক্ষ-কোটি তাঁরার হাট বহে আসমানে,
হগ্গল তাঁরা গুলান একটা চাঁন্দের পরীরে ঘিরা থাহে,
তহনও তোমার মুখখান পরানডাত ভাইস্সা ওডে,
মনে হয় আন্ধাইর আসমানডায় তোমার মুখখান কেউ বসাইয়া দিছে ।
তহন আমার কিছুই ভালা লাগে না,
মনডা চায় তোমার হাতখান ধইরা,
ধান ক্ষেতের আইল দিয়া দৌড়াইয়া খেয়া ঘাটে চইল্লা যাই,
তারপর ডিঙ্গি নৌকায় তোমারে চড়াইয়া,
লইয়া যাই একদম নদীর মইধ্যে খানে ।
তোমার মুখের ছায়া পইরা নদীর পানি সোনার লাহান চকচক করব,
বেবাক মাছ গুলান পানির ওপরে ভাইস্সা ওডবো,
তারপর হগ্গলে তোমারে গান হুনাইবো,
জঙ্গল থেইকা জোনাকি গুলানও,
বেবাক আইয়া পরবো তোমারে দেহনের লাইগ্গা।
যেইদিন আসমানে জোইছনা থাহে,
হেইদিন পরানডা চায় তোমারে লইয়া পদ্ম দিঘির পাড়ে যাইতে,
বড় বকুল গাছ তলায় তোমারে লগে লইয়া বইয়া থাকতে,
আর হারাডা রাইত পেঁচার লাহান চোখ মেইল্লা কেবল তোমারে দেহি ।
হুনছি জোইছনা রাইতে নাকি পরী নাইম্মা আহে জমিনে,
হেরা নদীর পার আর বন্দে ঘুইরা বেড়ায়,
হেইডা ভাবলে আবার খুব ডর লাগে আমার,
হেরা যাওনের কালে তোমারে হেগো-
সঙ্গী-সাথী ভাইব্বা যদি লইয়া যায় ।
যার ঘরে চাইল থাহে না, ডাইল থাহে না,
পিন্দোনে থাহে ছিড়া জামা,
বেইন্না বেলা উইঠঠা যে খাইতে পারে না,
তার আবার তোমার সখ লাগে কেন ?
কাডের গুণে খাওয়া চোকিত শুইয়া,
ছিঁড়া খেতা শইল্লে দিয়া যে গুমায়,
ঘুমের মইধ্যে যার শইল্লে উরশ-তেলাচুরা দৌড়াদৌড়ি করে,
বর্ষাকালে চালের ফুডা দিয়া পানি পরে গরে,
চৈত মাসের ঘরমে যে ঘুমাইতে না পাইরা ছটফট করে,
যার কিনা তোমারে রাহনের জায়গা নাই,
তার আবার তোমার লাইগ্গা এত্তো খোয়াব কেন?
যার থাউনের লাইগ্গা মাথার উপরে শক্ত চাল নাই,
তার আবার তোমার লাহান চাঁন ঘরে আননের আউশ লাগে কেন ?
ভাঙ্গা গরে কি আর চাঁন শোভা পায়,
চালের ভাঙ্গা দিয়া যে আলো আইবো ঐডাইতো বেশি !
মায় কইতো, বাজান চাঁন অইছে-
দুনিয়ার বেবাক জিনিসের চাইতে সুন্দর,
ঐডা দূরেত্তেই দেহন লাগে ।
কিন্তু আমি তো চাঁন্দে হাত দিয়া ফেলাইছি,
আর এহন চাঁন্দের আগুনে হাত পুরাইছি,
ভাঙ্গা গরের ভাঙ্গা জানলা দিয়া পোড়া হাত লইয়া,
চাঁন্দের আলো দেহন ছাড়া আর যে কিছুই করার নাই ।
তুমি হইলা আসমানের চাঁন,
আর আমি হইলাম জমিনের বামুন,
আমি না হয় তোমার আলোতেই বাঁচুম,
বামুন হইয়া কি আর চাঁন্দে হাত লাগান সাজে!
13 June 2020 at 03:00 AM
এই লেখার সমস্ত স্বত্বাধিকার © "রহিম বাদশা" এর সংরক্ষিত। এই লেখার কোন অংশই লেখকের অনুমতি ব্যতীত ফটোকপি, রেকর্ডিং, বা অন্যান্য বৈদ্যুতিক বা যান্ত্রিক পদ্ধতি সহ, কোনও আকারে বা কোনও উপায়ে পুনরুতপাদন, বিতরণ বা প্রেরণ করা যাবে না । তবে শেয়ার এবং লেখকের ক্রেডিট দেয়ার শর্তে অনুমতি দেয়া হলো।
অনুমতি অনুরোধের জন্য, লেখকের কাছে চিঠি লিখুন, নীচের ঠিকানায় -
"মেইল করুন বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যোগাযোগ করুন"
অনুমতি অনুরোধের জন্য, লেখকের কাছে চিঠি লিখুন, নীচের ঠিকানায় -
"মেইল করুন বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যোগাযোগ করুন"
No comments